শবে বরাত ২০২৪ | আমল | ফজিলত | নামাজের নিয়ম- Shab e Barat

 পবিত্র লাইলাতুল বরাত ২০২৪-Shab e Barat 2024

শবে বরাত কী

শবে শব্দের অর্থ হচ্ছে "রাত" আর বরাত শব্দের অর্থ হচ্ছে "ভাগ্য অথবা সৌভাগ্য"। এই দিন মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ ও ভাগ্য নির্ধারণ করেন। পবিত্র লাইলাতুল বরাত হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগী করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজেদের চাওয়া পাওয়া পূরণ হওয়ার জন্য জন্য দোয়া করে।

শবে বরাত ২০২৪ কবে-When Shab e barat 2024 will be held?

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল বরাত পালিত হবে।এই বিষয়টি রোববার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিকফাউন্ডেশন সভা কক্ষে সিদ্ধান্ত হয়।
কমিটির বৈঠক শেষে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, “রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে শাবান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায়, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হবে। ১৪ শাবান, ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার দিবাগত রাতে শবে বরাত পালিত হবে।”

আরবি হিজরী সনের শাবান‌ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়। এই রাতকে ভাগ্যরজনী বলা হয়ে থাকে। মহামান্বিত রাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সারা রাত নফল নামাজ জিকির ও কোরআন শরীফ পাঠদানের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের এই রাতে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। শবে বরাতকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এ রাতকে ভাগ্যরজনী, দোয়ার রাত, নিসুফু শাবান,বরকতময় রাত, শাবান মাসের মধ্যরজনী, শাফাআতের রাত, ক্ষমার রাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত, জীবন রাত্রি, তকদিরের রাত ও অন্য আরও অনেক নামে ভূষিত করা হয়েছে।

শবে বরাত নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত- Shab e Barat namaz niyat

অনেক মুসলিম ভাইয়েরা জিজ্ঞাসা করে থাকেন, পবিত্র লাইলাতুল বরাত রাতের জন্য কোন নির্দিষ্ট নামাজ আছে কিনা? 

না, লাইলাতুল বরাত রাতের জন্য কোন নির্দিষ্ট নামাজ নেই। যেহেতু, এই রাতটি ইবাদত বন্দেগী করে কাটাতে হবে তাই পবিত্র হাদিস শরীফে এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই ভাগ্য রজনী রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন। হাদিসের আলোকে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো: 

শবে বরাত নামাযের নিয়ত

আপনি যেকোনো নামাজের জন্যই দাড়ান না কেন মনে মনে ওই ওয়াক্ত নামাজের মনোভাব আনলেই নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। আরবি অথবা বাংলা যে কোন ভাষায় নামাজের নিয়ত করতে পারবেন। বাংলায় করলে নিয়ত এরূপ হবে: “শব-ই-বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর”।

শবে বরাত নামাজের নিয়ম

এই বিশেষ রজনীর শুরুতে অর্থাৎ সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়া এবং ঈমানের হেফাজত করার জন্য দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। এই ৬ রাকাত নামাজ স্বাভাবিক নিয়মেই পড়তে হবে এবং নামাজ শেষে সুরা ইয়াসিন অথবা সূরা ইখলাস ২১ বার তিলাওয়াত করতে হবে।

শবে বরাত রাতের নফল নামাজ

পবিত্র লাইলাতুল বরাত রজনীতে আমল করার জন্য নফল নামাজ অন্যান্য সাধারণ নফল নামাজের মতই আদায় করা হয়। ইবাদতে একঘেয়েমি যাতে না আসে সে ক্ষেত্রে আমরা দুই বা চার রাকাত নফল নামাজের পরে জিকির, ইস্তেগফার, দোয়া দুরুদ ও কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি এবং পুনরায় নফল নামাজ শুরু করতে পারি। শবে বরাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল শাবান মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা যা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে ২০২৪ সালের ২৪-২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই তিন দিন হল শবে বরাতের রোজার রাখার দিন।

যেহেতু শবে বরাত রজনী দীর্ঘ তাই এই রাতে সালাতুত তসবিহ পড়া যেতে পারে। এই নামাজ জীবনে একবার হলেও পড়ার তাগিদ রয়েছে।

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব (রা.)-কে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? ...আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সুরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কেরাত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন- সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় দোয়াটি ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এরপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদা অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।

যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন, তবে প্রতি জুমাবারে একবার। যদি প্রতি জুমাবারে না করেন, তবে প্রতি মাসে একবার। আর যদি তা-ও না পারেন, তবে জীবনে একবার। যখন দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার জন্য বসবেন তখন আগে ওই তাসবিহ ১০ বার পড়বেন, তারপর তাশাহুদ পড়বেন। তাশাহুদের পর তাসবিহ পড়বেন না। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবেন। এরপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে ওই তাসবিহ পাঠ করবেন।

কোনো এক স্থানে ওই তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক, সেখানকার সংখ্যার সঙ্গে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নেবেন। আর এই নামাজে কোনো কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সিজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে ওই তাসবিহ পাঠ করতে হবে না। তাসবিহর সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে। (আবু দাউদ: হাদিস ১২৯৭, ইবনে  মাজাহ: হাদিস ১৩৮৭, বায়হাকি কুবরা: হাদিস ৪৬৯৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে শবে বরাতের সকল ফজিলত আদায় করার তৌফিক দান করুন।

আসসালামু আলাইকুম ওরা রাহমাতুল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিপ আইটি বাড়ীর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url